উকিল : সমাজে যৌতুক হলো একটি কঠিন সামাজিক রোগ। আমাদের সমাজে গরীব-ধনী সব পরিবারেই যৌতুক প্রথা বিদ্যমান। যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাম- শহর সব জায়গাতেই স্ত্রীরা স্বামীদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে, কখনো কখনো মারাও যাচ্ছে। একাধিক সন্তানসহ নারীকে প্রায়ঃশই ঘর সংসার হারাতে হয় যৌতুকের কারণে। বাংলাদেশে হত্যাকান্ডের শিকার নারীর বিরাট অংশই যৌতুকের বলি। আমাদের প্রচলিত আইন যৌতুক প্রথা সমর্থন করে না। আইনে যৌতুক দেয়া ও নেয়া উভয়ই অপরাধ।
বাবা : আমরাতো যৌতুক বলতে শুধু মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষ যা দাবী- দাওয়ার মাধ্যমে আদায় করে নেয় তাকেই বুঝি। উকিল সাহেব আইনেও কি যৌতুক বলতে এটাই বুঝায়?
উকিল : সাধারণ অর্থে ‘যৌতুক’ বলতে বিয়ের সময় মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষের দাবী- দাওয়া আদায়কে বুঝালেও, আইনে বিয়ের শর্ত হিসেবে বর বা কনে যে কোন পক্ষের দাবী-দাওয়াকে যৌতুক বলে। ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন অনুসারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের আগে-পরে-চলাকালীন যে কোন সময় যে কোন সম্পদ বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করে বা করতে সম্মত হয় সেটাই যৌতুক বলে বিবেচ্য হবে। ব্যাখ্যা : ১
বাবা : বিয়েতে উপহার দিলে তাও কি যৌতুক হবে?
উকিল : সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের উপহার যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে যে এই উপহার অবশ্যই বিয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন কেউ প্রদান করতে হবে এবং বিয়ের পণ (যৌতুক) হিসেবে প্রদান করতে পারবেন না, উপহার হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের শর্ত হিসেবে ৫০০ টাকার সমমূল্যের কোন কিছুও দেয়া যাবে না, দিলে তা আইন অনুসারে যৌতুক হবে এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুসারে বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বা বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, যে কোন সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদকে যৌতুক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বাবা : উকিল সাহেব তাহলে মুসলিম বিয়েতে যে দেনমোহর ধরা হয় ও দেয়া হয় তাওতো যৌতুক হবে?
উকিল : না, তা হবে না। কারণ, ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২(খ) ধারায় বলা হয়েছে- যৌতুক বলতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মোতাবেক ব্যবস্থিত দেনমোহর বা মোহরানা বুঝাবে না।
বাবা : যৌতুক দেয়া ও নেয়া কি অপরাধ ?
উকিল : হ্যাঁ, যৌতুক দেয়া-নেয়া উভয়ই আইনের চোখে সমান অপরাধ। ব্যাখ্যা : ২
বাবা : যৌতুক নিলে কি শাস্তি হতে পারে ?
উকিল : যৌতুক নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। যৌতুক আদায়ের জন্য নির্যাতন করলে বা স্ত্র্রীর মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ড। ব্যাখ্যা : ৩
বাবা : যৌতুকের জন্য নির্যাতিত নারীরা কোথায় জরুরী চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন ?
উকিল : কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্যাতিত নারীদের জরুরী স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। যেমন :
বাবা : যৌতুক নিরোধে কোন প্রতিষ্ঠান কি আইনগত সেবা দেয় ?
উকিল : যৌতুকের কারণে কোন নারী নির্যাতিত হলে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনগত সহায়তা উপ-পরিষদ তাদেরকে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে থাকেঃ
বাবা : যৌতুক নিরোধে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আইনগত সেবা প্রদান করে ?
উকিল : যৌতুক নিরোধে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আইনগত সেবা দিয়ে থাকে। যেমন-
ঠিকানা | ঠিকানা |
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সুফিয়া কামাল ভবন, ১০/বি/১ সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০ ফোন -৭১৬৯৭০১, ফ্যাক্স ৮৮-০২-৯৫৬৩৫২৯, ই-মেইল: mahila@bd.com | মহিলা আইনজীবী সমিতি, ৪৮/৩, মনিকো মিনা টাওয়ার, পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা, ফোন-৯১৪৩২৯৩ ই-মেইল :
|
আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ৭/১৭, ব্লক-ই, লালমাটিয়া, ঢাকা, ফোন-৮৩১৫৮৫১, ৮১২৬১৩৪, ৮১২৬১৩৭ ৮১২৬০৪৭, ই-মেইল : ask@citechco.net | ব্লাস্ট, ১/১ পায়নিয়ার রোড/ ওয়াইএমসিএ, কাকরাইল, ঢাকা, ফোন-৮১৭১৮৫, ৯৩৪৯১২৬ |
বাবা : স্থানীয়ভাবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান আইনগত সহায়তা প্রদান করে ?
উকিল : আমাদের স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যৌতুক নিরোধে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে। যেমন-
বাবা : যৌতুক দেয়া ও নেয়া বন্ধ করার জন্য আমরা কি করতে পারি ?
উকিল : সংশ্লিষ্ট মহল যেমনঃ সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের উচিত যৌতুক নিরোধ আইন সর্ম্পকে সবাইকে জানানো ও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে আইনী সহায়তা প্রদান করা।
যৌতুকের জন্য তানিয়ার উপর অত্যাচার করার কারণে মাসুদ ও বাবা-মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১১ ধারার খ উপধারা অনুযায়ী কারাগারে শাস্তি ভোগ করছেন। যৌতুকের কারণে আমাদের দেশের অসংখ্য নারী নানা রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুক দেয়া ও নেয়া উভয়ই সমান অপরাধ। তাই এ ধরণের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। |
প্রশ্ন ১: যৌতুক গ্রহণ ও যৌতুক প্রদান কি অপরাধ?
উত্তর: আইনের চোখে যৌতুক গ্রহণ ও যৌতুক প্রদান দুটোই অপরাধ।
প্রশ্ন ২: যৌতুকের জন্য স্ত্রীর মৃত্যু ঘটালে বা সাধারণ অথবা মারাত্মক জখম করলে কি শাস্তি হতে পারে?
উত্তর: আইন অনুযায়ী,
প্রশ্ন ৩: যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হলে কি করা যায়?
উত্তর:আদালতে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করতে হবে অথবা আইন সহায়তাকারী সংগঠন সমূহের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন ৪: দেনমোহরকে কি যৌতুক বলা যাবে?
উত্তর: না, দেনমোহরকে কখনোই যৌতুক বলা যাবে না।
তথ্যসূত্র
যৌতুক : ব্যাখ্যা
ব্যাখ্যা : ১ | ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারা অনুযায়ী: বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী না হলে, এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোন সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বুঝাবে, যা¾ (ক) বিবাহের এক পক্ষ অপর পক্ষকে; অথবা (খ) বিবাহের কোন একপক্ষের পিতা মাতা বা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিবাহের যে কোন পক্ষকে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে বিবাহকালে বা বিবাহের পূর্বে বা পরে যে কোন কালে বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদান করিতে সম্মত হয়; তবে, যৌতুক বলতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মোতাবেক ব্যবস্থিত দেনমোহর বা মোহরানা বুঝাবে না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০০৩-সংশোধিত) এর ২ (ঞ) ধারা অনুযায়ী : ‘যৌতুক অর্থ’ (ক) কোন বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সাথে জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তারপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে বিবাহের কনে পক্ষের নিকট দাবীকৃত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ; অথবা (খ) কোন বিবাহের কনেপক্ষ কর্তৃক বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সাথে জড়িত বর পক্ষের অন্য কোন ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তারপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ। |
ব্যাখ্যা : ২ | ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা অনুসারে যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক যৌতুক প্রদান বা যৌতুক গ্রহণ করা অথবা যৌতুক প্রদান বা যৌতুক গ্রহণে সহায়তা করা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের ৪ ধারা অনুসারে যৌতুক দাবী কারও অপরাধ। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১১(ক), ১১(খ), ১১(গ) ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা বা মৃত্যু ঘটানো বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করা অপরাধ। |
ব্যাখ্যা : ৩ | ◊ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে, ১ থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় ধরণের শাস্তি হতে পারে।
|
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS